লালসবুজের কন্ঠ,
সবনাজ মোস্তারী স্মৃতি
খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যায় তুলির। অাজ কাল বড্ড ব্যস্ত সময় পার করছে। নতুন চাকুরি সব মিলিয়ে ভীষণ ব্যস্ত।
শীতের সকাল। কুয়াচ্ছন্ন ভোর।এমন ভোরে নদীর ধারে গিয়ে বসতে বেশ ভালোবাসে তুলি। তবে এখন আর সময় হয় না তেমন নদীর ধারে যাবার। শেষ কবে গেছিলো মনে করতে কষ্ট হচ্ছে। একটা সময় একদিন নদীর ধারে না গেলে দম বন্ধ হয়ে আসতো অথচ এখন তার কিছুই মনে হয় না। সময় আর পরিস্থিতি কত তাড়াতাড়ি মানুষকে বদলে দেয় এখন তুলি বুঝতে পারে খুব সহজে।
তাই কারো পরিবর্তন হতে দেখলে বা বদলে গেলে তার মন খারাপ হয় না, খারাপ লাগে না। তুলি বিছানা ছেড়ে উঠে তৈরী হয় অফিসে যাবার জন্য। আজ মন চাইছে ভীষণ নদীর ধারে গিয়ে বসে একটু লেখালেখি করতে। কিন্তু অফিস তো যেতেই হবে।
বাড়ি থেকে বের হয়ে রিকশা নেই অফিস যাবার উদ্দেশ্যে তবে মাঝ পথে রিকশাওয়ালাকে বলে রিকশা ঘুরিয়ে নদীর ধারের বটতলায় যেতে। কতদিন বটতলায় যাওয়া হয় না।
তুলি বটতলায় বসে। এই বটতলায় বসেই তার কত গল্প লেখা হয়েছে। যেনো এখানে সমস্ত গল্প জমা হয়ে থাকে তুলির জন্য।
ভীষণ ভালো লাগছে তুলির। মনে হচ্ছে কত দিন পর প্রান ভরে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারছে সে।
এই বটতলায় লুকিয়ে আছে তুলির কত স্মৃতি। এখানে আসলেই যেনো স্মৃতির পসরা খুলে বসে। কখনো ঠোঁটের কোনে হাসি কখনো বিষাদে ভরা চোখ এখন সবটাই উপভোগ করে তুলি।
রোহানেরর সাথে এখানে বসা হয়েছিলো বছর সাতেক আগে। তখন তারা কেবল স্কুল জীবন শেষ করে কলেছে উঠেছে। কত মারামারি ঝগড়া ঝাটি করেছে এখানে। কত আড্ডা হাসি কান্না,রাগ অভিমান মিশে আছে এখানে। এখন সব কিছুই স্মৃতি।
আসলে মানুষ হারিয়ে যায় অথচ স্মৃতি রয়ে যায়। কী অদ্ভুত নিয়ম এটা।
তুলি পাশের চায়ের টং এর দোকানে গিয়ে এক চাপ চা দিতে বলে বেঞ্চিতে বসে। কুয়াশার জন্য তেমন ভালোভাবে কিছু দেখা যাচ্ছে না। তবু নদীর মাঝে কিছু পাল তোলা নৌকা যাচ্ছে সেগুলো দেখতে ভীষণ ভালো লাগছে। ইচ্ছে করছে যদি পাশে রোহান থাকত তবে তার কাধে মাথা রেখে চুপচাপ তাঁকিয়ে থাকত এই সুন্দর দৃশ্যের দিকে।
চাওয়ালা চা দিয়ে গেলে তুলি চায়ের কাপে চুমুক দেয়। বিশ্রি চায়ের স্বাদ। লিকার এত বেশি যেনো মনে হচ্ছে নিম পাতা বেটে চায়ের কাপে ঢেলে দিয়েছে। সুন্দর এমন একাকিত্বের মুহূর্তে এমন নিমপাতা চা সত্যি ভীষণ বিরক্তিকর। তবে তুলি আর কিছু না ভেবে সেই তেঁতো চায়ে বারবার চুমুক দেয়। উপভোগ করে তেঁতো চায়ে একাকিত্বের স্বাদ।
সমাপ্ত
Leave a Reply