লালসবুজের কণ্ঠ রিপোর্ট, রংপুর
মাঘের শীতের প্রকোপের মধ্যে অসময়ে টানা বৃষ্টিতে রংপুরের আলু ও সরিষা ক্ষেতে পানি জমে যাওয়ায় ফসল নষ্টের দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। গত শুক্রবার ভোর থেকে শুরু করে শনিবার সকাল পর্যন্ত রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় মুষুলধারে বৃষ্টি হয়েছে; এর মধ্যে রংপুরে সর্বোচ্চ ৫৫ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রংপুর আবহাওয়া কার্যালয়ের কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান।
রবিবার(৬,ফেব্রুয়ারি) সকালে স্বরেজমিনে দেখা যায়, ঠান্ডার মধ্যেই কৃষকরা আলু ক্ষেতের পানি বের করে দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সব আলুর ক্ষেতেই পানি জমে আছে প্রায় হাটু সমান। একই অবস্থা সরিষা ক্ষেতেরও।
বালাকুমার এলাকার হাফিজুল ইসলাম সকাল বাহার কাছনা হাজীপাড়ার কৃষক মানিক চৌধুরী জানান, সকাল থেকেই ক্ষেতের পানি সরাতে কাজ করছেন। তিনি বলেন, “ভাই তিন একর জমিতে আলু চাষ করছি। আর কয়েকদিন গেলেই আলু তোলা যাবে। হঠাৎ বৃষ্টি জমিতে পানি জমে আছে। পানি কোথায় দিবো সে রকম কোনো জায়গা নেই চতুর্দিকে আলু আর আলু। এক একর জমির আলু পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। আরো দুই সপ্তাহ পর আলু তোলা যেত, পানিতে দুই সপ্তাহ আগেই আলু তুলে ফেলছি পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে। অপরিপক্ক আলুর জমিতে, বৃষ্টির এই পানি যদি চার-পাঁচ দিন জমে থাকে তাহলে আলু পচে যাবে। কী করে পানি বের করে দিব তাই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
চিলমন এলাকার মহিবুর রহমান বলেন, আলুর জমিতে বোরো ধান লাগানোর জন্য বীজতলা তৈরি করে ধানের বীজ ফেলেছি। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টির কারণে বীজতলা ডুবে গেছে। তাই পানি বালতি দিয়ে তুলে ফেলছি। না হলে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাবে।
অসময়ের এই বৃষ্টিতে আলু ও বোরোর বীজতলার প্রচুর ক্ষতি হবে বলে ধারণা করছেন ময়নাকুটি এলাকার আলুচাষি আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, “নিচু জায়গায় বোরোর বীজতলা তৈরি করেছি, সেটি ডুবে গেছে। ফলে বোরো ধান রোপণ নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। সেই জমিতে পানি জমে গেছে। আলু তোলার সময় এই বৃষ্টিতে বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল। জমিতে পানি জমায় আলু পচে যাবে। বৃষ্টির কারণে সরিষাও মাটিতে পড়ে গেছে।
মানুষের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে চওড়ারহাট এলাকার বাতেন সরকার বলেন, চার একর জমিতে আলু আবাদ করছেন। মাঘ মাসের হঠাৎ বৃষ্টির কারণে আলুর জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে এই কৃষকের।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান বলেন, “ গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। শনিবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে আলু ও সরিষার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে যেসব আলু হারভেস্ট করার পর্যায়ে এসেছে সেগুলোর সমস্যা হবে। “এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে আলু চাষীদের পানি বের করে দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছে।
রংপুর আবহাওয়া কার্যালয়ের কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৭০ শতাংশ।
মিজান/রংপুর/শান্ত
Leave a Reply