লালসবুজের কণ্ঠ রিপোর্ট, ফরিদপুর:
গত ২ জুলাই ২০২০ তারিখ ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কোরদি ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামে খুন হন কৃষক সিদ্দিক মোল্যা (৬০)। উক্ত হত্যাকান্ডের পর মধুখালী থানায় ৬০ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের পুত্র কামরুল মোল্যা (মধুখালী থানার মামলা নং ৪ তারিখ ৪/০৭/২০২০ ইং)।
উক্ত মামলায় বাগাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাগাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান বাগাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মতিয়ার রহমান খানসহ তার পরিবারের সাত সদস্যকে আসামী করা হয়। হত্যাকান্ডের পর কাটাখালীসহ ও আশেপাশের গ্রামস্থ প্রতিপক্ষের বাড়ীতে নজিরবিহীন ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয় মর্মে অভিযোগ উঠে।
জানা যায় প্রায় অর্ধশত গরুসহ লুটের তালিকায় ঘরের আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ, ক্ষেতের ফসল এমনকি টিউবয়েল পর্যন্ত বাদ পড়েনি। অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন পরিদর্শনে ঘটনার সত্যতাও পাওয়া যায়। হত্যা মামলাটি দায়ের হলে মধুখালী থানা পুলিশ তদন্তে নামে। মামলাটি তদন্তের দায়িত্বভার অর্পন করা হয় সাব-ইন্সপেক্টর মোঃ সাজ্জাদ হোসেনের উপর। দীর্ঘ তদন্ত শেষে তিনি ১৩ অক্টোবর ২০২০ তারিখ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ ও নির্দেশনার আলোকে আমি সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। মামলাটি তদন্তের সময় তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়।
তিনি আরও বলেন মামলাটিতে একাধিক জনপ্রতিনিধি থাকায় চুলচেরা বিশ্লেষণ শেষে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র দাখিল করা হলো। অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়ে মধুখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, স্পর্ষকাতর মামলা হওয়ায় তদন্তের প্রতিটি অধ্যায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে পুলিশ সুপার মোঃ আলীমুজ্জামান স্যারসহ এএসপি (সার্কেল) আনিচুজ্জামান লালন স্যার গভীরভাবে তদন্ত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন এবং তাদের দিক নির্দেশনার আলোকে ন্যায় বিচারের স্বার্থে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অভিযোগ পত্র দাখিল করা হয়েছে।
এদিকে কৃষক সিদ্দিক মোল্যা হত্যা মামলাটির চূড়ান্ত অভিযোগপত্র থেকে অব্যহতি পেয়েছেন বাগাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মতিয়ার রহমান খাঁন। এ উপলক্ষে বাগাট ইউনিয়নের সর্বোস্তরের জনগণ এক গণসংবর্ধনার আয়োজন করেন। বাগাটবাসী তাঁকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন। শতাধিক মোটর সাইকেল শোভাযাত্রাসহকারে সহস্রাধিক মানুষ মধুখালী উপজেলা পরিষদ থেকে বাগাট ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছুটে যান। এসময় বাগাট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের কাউন্সিলর দেব প্রসাদ রায় দেবু, প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রব মুন্সি, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য অর্চনা রানী বসু, ইউনিয়ন পরিষদের অন্যান্য সদস্যগণসহ সর্বস্তরের জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মোঃ মতিয়ার রহমান খাঁন বলেন, আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা দুঃখজনক হত্যাকান্ডটির সাথে জড়িত ছিলাম না। কিন্তু গত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পরাজিত প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের মুষ্টিমেয় নেতা-কর্মীর ইন্ধনে আমিসহ আমার পরিবারের নিরীহ সদস্যদের অন্যায়ভাবে আসামী করে হয়রানী করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সত্যের জয় চিরন্তন। মহান আল্লাহর রহমতে আমি আজ আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা মিথ্যা হয়রানীমূলক মামলা হতে অব্যহতি পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ যারা লালন করে তারা কখনও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না। আগামী দিনে বাগাট ইউনিয়নকে নৌকার ঘাঁটি হিসেবে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে বাগাটবাসীকে সাথে নিয়ে কাজ করে যাবেন মর্মে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
হাইব্রীড আওয়ামীলীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দিনে নৌকা আর রাতে ধানের শীষ, এই খেলা বাগাট ইউনিয়নে চলবে না। আওয়ামীলীগ করতে হলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণের পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দেখানো পথে চলতে হবে। বক্তব্য শেষে তিনি নিহত কৃষক সিদ্দিক মোল্যার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
ডেস্ক/হাবিবা
Leave a Reply